মো. আমির হোসেন ঢালি
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের নাগরিকদের জন্য ভরসা সরকারি একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরে অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স বছরের পর বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে অচল পড়ে আছে। রোদ-বৃষ্টিতে দরজা-জানালা মরিচা ধরে ভেঙ্গে গেছে। মরিচা ধরেছে যন্ত্রপাতিতেও। উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়ার জন্য একজন চালক ও একটিমাত্র অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এতে রোগী পরিবহনের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উপজেলার প্রান্তিক জনসাধারণের। তাদের বেশি ভাড়া দিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এমনটা হয়েছে বলে অভিযোগ উপজেলার বাসিন্দাদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনের পেছনে গ্যারেজ সংলগ্ন খোলা আকাশের নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে একটি অ্যাম্বুলেন্স। দরজা, জানালা খসে পড়ছে। ভিতরে যন্ত্রাংশের বেশিরভাগই নেই। অবশিষ্ট যন্ত্রাংশ মারিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে সচল করার মতো অবস্থায় নেই।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের প্রথম দিকে অ্যাম্বুলেন্সটি নষ্ট হতে শুরু করে। পরে সে বছরই নভেম্বরের নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার পর সেটাই ব্যাবহার করা হচ্ছে। আস্তে আস্তে পুরানোটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। এখন একটি অ্যাম্বুলেন্স ও একজন চালকের রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক সময় জরুরি রোগীদের ঢাকায় বা অন্য হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া দিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহন করতে হয়।
এ কারণেই হাসপাতালের অভ্যন্তরে গড়ে উঠেছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের পার্কিং। দ্বিগুণ তিন গুন ভাড়া নিয়ে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক ও বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সঙ্গে মারপিটের ঘটনাও ঘটেছে।
উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা সায়েম বলেন, সম্প্রতি আমার বাবা হৃদরোগ আক্রান্ত হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তখন জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। পরে বেশি ভাড়া দিয়ে বেসকারি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাই।
মধ্যপাড়া এলাকার সোহাগ আহমেদ বলেন, আমার এক আত্মীয়কে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম। রোগীর অবস্থা একটু খারাপ দেখলেই হাসপাতালের চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তখন সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটি সঠিক সময় পাওয়া যায়নি। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। অনেকেই আর্থিক দুর্বলতায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া সম্ভব হয় না। নিরুপায় হয়ে সিএনজিতে রোগীদের নিয়ে যেতে হয়। তখন রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জামশেদ ফরিদি বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি অ্যাম্বুলেন্স যথেষ্ট নয় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে অবৈধ বেসরকারি এম্বুলেন্স পার্কিং এর বিষয়ে বলেন, হাসপাতালের ভিতর থেকে সকল এম্বুলেন্স সরিয়ে ফেলতে কয়েকবার বলা হয়েছে। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত লোকবল না থাকার সুযোগে তারা ভিতরেই অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করে রাখে।